জীবন-স্রোতে আরও একটি বছর ও প্রশান্তি রীতি
ডিসক্লেমার:
এটি ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে আতশবাজির একটি বিকল্প উদযাপন, এই উদযাপন প্রাণীদের কোনো ক্ষতি করে না, পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, অন্তর্দৃষ্টি ও শান্তির প্রতি উন্মুক্ত।
এই প্রশান্তি রীতিটি এই যে এক বছর বেঁচে ছিলাম এবং সামনে আরও একটি বছর আসছে, সেই উদ্দেশ্য কৃতজ্ঞতা জানানোর নিমিত্তে নির্মিত।
আমরা জানি, কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়বস্তুকে বিচার করতে পারেন। তাই স্পষ্ট করতে চাই, এই লেখাটি কোনোভাবেই কোনো ধর্মীয় আচার বা বিশ্বাসকে ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে রচিত নয়। এটা একটা মানবিক অনুভূতি, প্রশান্তি, এবং নতুন বছরের কিকরে আরও নম্র ও নিরহঙ্কার থাকা যেতে পারে সেই উদ্দেশ্য রচিত। এটিকে কোনোভাবেই কোনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে তুলনীয় করে কোনও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান কে কোনও অবস্থাতেই অবমাননা করা যাবে না।
যদি কোনো পাঠক মনে করেন জলের পাত্রে কাগজের লেখা গুলোকে (অর্থাৎ আপনি যদি কাগজে লিখে থাকেন- অহংকার, দুশ্চিন্তা, ক্ষোভ, হিংসা) ভিজিয়ে কাগজটিকে দ্রবীভূত করে ফেলা কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে মিলে যায়, তবে স্পষ্ট করতে চাই এটা শুধুমাত্র একটি সাধারণ প্রতীক হিসেবে আনিত, ঠিক যেমন সাদা রংয়ের পায়রা উড়িয়ে দেয়াকে মানুষ শান্তির প্রতীক হিসেবে ধরে। ঠিক যেমন মানুষ একপ্রকার আশার প্রতীক হিসেবে বেলুন উড়িয়ে দেয়। ঠিক যেমন মানুষ মিষ্টি খায় উৎসব প্রকাশে, দুঃখ প্রকাশে নয়। ঠিক যেমন মানুষ ফুলের তোড়া দেয় শুভেচ্ছা জানানোর জন্য। ঠিক যেমন দুঃখ পেলে মানুষ (সিনেমা নাটকে দেখায়) পাথর ছুঁড়ে নদীর জলে, এটাও তেমনই একটা সর্বজনীন এবং প্রতীকী রূপ। এর উদ্দেশ্য মানসিক ভারমুক্তি, নতুন বছর শুরু করার প্রেরণা এবং নিজের ভেতরে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। আবারও উল্লেখ করা হলো- এটিকে কোনোভাবেই কোনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে তুলনীয় করে কোনও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান কে কোনও অবস্থাতেই অবমাননা করা যাবে না।
এটি প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ধারণা থেকে আংশিক প্রভাবিত, যেখানে গভীরভাবে শোনার চেষ্টা ও নীরবতা পালনের মাধ্যমে মনের শান্তি অর্জনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়ে আসছে হাজার বছর ধরে।
প্রত্যেকের ধর্ম, বিশ্বাস, এবং ব্যক্তিগত মতামতের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখে নতুন বছরে আমাদের উদ্দেশ্য যেন একটাই থাকে একটা সহমর্মী, সহাবস্থানের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে মানুষ, গাছপালা, পশুপাখির এই জীবজগতে- মানুষ হিসেবে আমরা আরও যেন বিনয়ী হয়ে উঠতে পারি… জল যেমন সবকিছু ধারণ করে নিজেকে মাটির সাথে মিশিয়ে মিশিয়ে চলে তেমন ডাউন টু আর্থ যেন হয়ে উঠতে পারি।
প্রশান্তি রীতি:
১।
পুরনো বছরের বিদায়ী দিনে ও নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আগে নিজের ও বাড়ি ভেতর-বাহির পরিচ্ছন্ন রাখুন।সামর্থের মধ্যে বিশেষ কোনও খাবারের আয়োজন করুন।
২।
সারাদিন, বা রাতে, নিজের পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব বা প্রিয়জনদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান। তাদের জানিয়ে দিন, আপনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
৩।
বাড়ির একটি নিরালা কক্ষ বা কোণ নির্বাচন করুন। উজ্জ্বল আলো পরিহার করুন। কক্ষটি স্বল্পালোকিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। একটা মাঝারি আকৃতির পাত্রে পরিষ্কার জল রাখুন। আপনার ব্যক্তিগত কোনও নোটবুকে একটা শুভ তালিকা তৈরি করুন।
লিখে রাখুন:
বিগত বছরের যে সমস্ত জিনিস বা অভিজ্ঞতার জন্য আপনি কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ এই বিশ্ব-প্রকৃতির কাছে, কৃতজ্ঞ স্রষ্টার কাছে। নতুন বছরে আপনার যদি কিছু অভ্যাস বা গুণ অর্জন করতে চান, সেটাও লিখুন। এই তালিকা তৈরি করার সময় ধীরে ধীরে শ্বাস নিন এবং নিজের ভেতরে একটা ইতিবাচক অনুপ্রেরণা ছড়িয়ে পড়তে দিন।
৪।
নতুন বছরে আপনি যদি কোনও পুরনো দুঃখ, দুশ্চিন্তা বা নেতিবাচকতাকে বিদায় জানাতে চান (যেমন দুশ্চিন্তা, হতাশা, বা নেতিবাচক অভ্যাস ইত্যাদি) সেটা আরেকটি কাগজে ছোট ছোট করে লিখুন। তারপর কাগজটিকে পাত্রের জলে ভিজতে দিন এবং আস্তে আস্তে দ্রবীভূত হয়ে যেতে দিন। এই অংশটা আপনি রূপক অর্থে পালন করতে পারেন। মনে মনে কল্পনা করতে পারেন, এই সমস্ত নেতিবাচকতাকে আপনি বিদায় জানাচ্ছেন।
৫।
চোখ বন্ধ করুন। ভাবতে থাকুন নিজের মনোন্নয়নের কথা, ভাবতে থাকুন আপনার প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী এবং এই নীল-সবুজ-সাদা-কালো-বাদামী রংয়ের পৃথিবীর ভালোর জন্য। গভীরভাবে শোনার চেষ্টা করুন আপনার মন আপনাকে কি বলছে। আপনার এই নিরবতা পালনের কোনও পর্যায়ে যদি মন থেকে যদি কোনওভাবে কোনও আইডিয়া কোনও মেসেজ পান তা আপনার ব্যক্তিগত নোটবুকে টুকে রাখুন।
৬।
নতুন বছরের প্রথম রাতে বা সকালে প্রকৃতিতে কিছুক্ষণ সময় কাটান। যদি তা সম্ভব না হয়, ভোরবেলা জানালা বা বারান্দা থেকে সূর্যোদয় দেখুন। এই যে আরেকটি দিন দেখতে পেলেন, সৃষ্টিকর্তার সেই দানকে উপলব্ধি করে জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং নতুন বছরকে আলিঙ্গন করুন।
বিদায় ২০২৪
৩১ ডিসেম্বর