যুদ্ধের ছাই থেকে পুনর্জন্মের শহর ড্রেসডেন


ড্রেসডেন, ইতিহাস এবং শিল্পকলার অনবদ্য মিশ্রণে গড়ে উঠেছিল জার্মানির এক অনন্য শহর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই ঐতিহাসিক ও বেসামরিক শহরটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিত্রবাহিনীর বোমা হামলায় পুরো শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। তবে যুদ্ধের পরবর্তী দশকগুলোতে ড্রেসডেনকে ধীরে ধীরে পুনর্নির্মাণ করা হয়। যদিও পুনর্নির্মাণ  কতটা সফলতা নিয়ে আজও কিছু বিতর্ক আছে, তবুও ড্রেসডেন আজও ইউরোপের অন্যতম সুন্দর শহর হিসেবেই পরিচিত।


শহরের মাঝে দিয়ে বয়ে গেছে অদ্ভুত প্রশান্তির এলবে নদী।


২০১৪ সালে। আমরা তখন অ্যাডিলেডে থাকি। সেই সময়, আমার সঙ্গী অ্যাডিলেড ইউনিভার্সিটিতে  পিএইচডি করছিল। একটা  বিশেষ কাজের জন্য তাকে জার্মানির লাইবনিজ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যান্ট জেনেটিকস অ্যান্ড ক্রপ প্ল্যান্ট রিসার্চ এ যেতে হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল পার্টিক্যাল গান বোম্বার্ডমেন্ট বা বাংলায় জিন বন্দুক প্রযুক্তি (বলা যাতে পারে হয়ত) তে কিছু ট্রান্সজেনিক বার্লি গাছ তৈরি করা। বার্লি গাছের রোগ প্রতিরোধী একটা জিনের কার্যকারিতা নিয়ে কাজ করছিল সে।

আমারও পিএইচডিরও প্রচুর চাপ ছিল। পিএইচডি স্টুডেন্টরাছরে এক মাসের ছুটি পেতে এনটাইলেল্ড। সুপাইভাইজারদের সাথে আলোচনা করে আমি সে বছর মে মাসে ছুটিটা নিয়ে জার্মানিতেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।

লাইবনিজ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যান্ট জেনেটিকস অ্যান্ড ক্রপ প্ল্যান্ট রিসার্চ গ্যাটার্সলেবেনে (Gatersleben, Germany)। প্রথম সপ্তাহের কাজ শেষে গ্যাটার্সলেবেনের প্রথম উইকেণ্ডে আমরা মাগদেবার্গে গিয়েছিলাম, দ্বিতীয়  উইকেণ্ডে গিয়েছিলাম ড্রেসডেন হয়ে প্রাগ এ। তৃতীয় উইকেণ্ডে গিয়েছিলাম ব্যর্লিনে। ড্রেসডেন নিয়েই আজ সামান্য বলব।


আমরা ড্রেসডেনে তিন দিন ছিলাম। শহরের কোণায় কোণায় শিল্পকলা আর স্থাপত্যের ছাপ। অন্যতম স্মরণীয় একটা যায়গা ছিল জ্ভিঙ্গার প্যালেস (Zwinger Palace)। আমরা শনিবার ভোর সকালে উঠে হাঁটতে বের হলাম। অত সকালে লোকজন রাস্তায় একেবারেই কম ছিল। এলবে নদীর ঠাণ্ডা শান্ত একটা বাতাস, কি যে প্রশান্তি লাগছিল। হাঁটতে হাঁটতে, কাগজেরর ম্যাপটা দেখতে দেখতে একসময় জ্ভিঙ্গার প্যালেসে এসে পড়লাম। আদতে জ্ভিঙ্গার প্যালেস স্যাক্সনি রাজাদের জন্য নির্মিত হয়েছিল, এখন এটা একটা বিখ্যাত জাদুঘর কমপ্লেক্স। 


জ্ভিঙ্গার প্যালেসে আমরা অনেক ছবি তুলছিলাম, কিন্তু একটা ভাল ছবি তোলার চেষ্টা করতে করতে দেখি হঠাৎ একটা মেয়ে এগিয়ে এল, বলল- ‘দাঁড়াও আমি তোমাদের ছবি তুলে দিচ্ছি’। আমি ওকে বুঝিয়ে বলতে চেষ্টা করলাম কোনদিক থেকে কিভাবে নিলে কোন ভিউটা আসবে ইত্যাদি। মেয়েটা হাসতে হাসতে বলল, ‘আচ্ছা কোনও সমস্যা নেই, আমি প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার, ডোণ্ট ওয়ারী।' মেয়েটার নাম ছিল ইনেস কোডেল (Ines Ködel)। পরে অবশ্য ফেসবুকে আমরা কানেক্ট হয়েছিলাম, এখনও মাঝে মাঝে যোগাযোগ হয়। সে একেক সময় একেক দেশে যায় ছবি তোলার কাজে। মাদাগাস্কারে তোলা ওর ছবি গুলো অসাধারণ সুন্দর, সব ছবিই সুন্দর যদিও। 


ড্রেসডেনে আমরা একটা ফার্মারস মার্কেট পেয়েছিলাম। জার্মানিতে উইকেন্ডে এই বাজারগুলো বেশ জনপ্রিয়। স্থানীয় কৃষকরা এখানে তাজা ফল, সবজি, ফুল, এবং বাড়িতে বানানো বিভিন্ন পণ্য, পৈত্রিক পুরুষের রেখে যাওয়া অ্যাণ্টিক জিনিসপত্র নিয়ে আসে। আমি দু একটা অ্যাণ্টিক স্যুভেনির আর কাঠের তৈরি একটা ওয়ালপিছ কিনলাম।  


আমার স্মৃতিতে চিরকাল জুড়ে থাকবে - খুব সকালে এলবে নদীর ধার ধরে হেঁটে যাওয়ার শান্তিময় মুহূর্তটুকু।


১ ডিসেম্বর ২০১৮

উমিও, সুইডেন