এখনও অপরিস্ফুট বসন্ত এখানে


দীর্ঘ শুষ্ক শীতের শেষে বোথনিয়া উপসাগরের স্রোতধারায় নিশ্চয় এখন উষ্ণতা এসেছে। খাতাকলমের বসন্ত এখানে শুরু হয়ে শেষও হয়ে যাচ্ছে। জুন থেকে শুরু হবে গ্রীষ্ম। অথচ এই উত্তরে গত পরশু পর্যন্তও তুষার ফোঁটা ঝরেছে।  

তবে সুইডেনের বসন্ত আর গ্রীষ্মের মতো আর কিছু নেই। প্রকৃতির এমন বৈপরীত্য এমন বৈচিত্র্য! একটু ধৈর্য্য ধরতে হয় শুধু। 

তুষার গলে যাওয়ার সাথে সাথেই ওমা কত যে বুনো ফুল মাথা চাড়া দেয়, পথে পাশে, জংলা হ্রদের ধারে, নদীর দুপাশের আধজমা বরফ ভেদ করে, ওরা উঁকি দিতে শুরু করে, বলে – ‘আসব আমরা এখন, সব ঠিক আছে তো?  আসা যাবে? এই যে আসলাম কিন্তু!’  

দিনগুলো বড় এখন। আমাদের জানালার সামনের পপলার গাছ গুলোয় কালো পাখিরা ঠোঁটে বয়ে আনা খড়, শুকনো ডাল ইত্যাদি দিয়ে বাড়িঘর তৈরির বন্দোবস্ত করছে বেশ কিছুদিন থেকেই। ওরা কী যে সুন্দর করে গায়। একেকবার একেক সুরে- মেয়ে পাখি একভাবে, ছেলে পাখি একভাবে! জীর্ণ চোখের বদলে এখন পাখিদের চোখ তিরিং তিরিং করে– পোকা খোঁজে, বাড়ি বানাবার গাছ খোঁজে, এপাশ ওপাশ দেখে, উড়ে যায় নীলাভ আকাশে,  দল বেঁধে – দল নৃত্যের ভঙ্গিমায় চক্কর দিতে দিতে। ওরা এখন উষ্ণ সূর্যের বন্দনায় কী যে আনন্দে কিচ মিচ করে!

আর ছোট ছোট কতগুলো নীল ফুল এখানে বসন্তের নিশান। এদের নাম নীলতারা। উত্তরের বসন্তে যদিও তুষার পড়ে, যদিও ঠাণ্ডা বাউল বাতাস বয়ে যায় সময়ে অসময়ে, তারপরও মাটির বুকের তুষার ফুঁড়ে সবফুলের আগে উঁকি দেয় নীলতারা ফুল। এখন অবশ্য হালকা হালকা করে গজাচ্ছে আমাদের এখানে কিন্তু আর কদিন বাদেই এমন ঘন হয়ে যাবে যে নীল কার্পেটের মতো মনে হবে দূর থেকে। তবে দক্ষিণের দিকে ইতিমধ্যে নীলতারার মাদুর বিছিয়ে যাওয়ার কথা। ক্ষণজন্মা ফুল, থাকবেনা এরা বেশিদিন। মাটির বুকে মাত্র কটাদিন নীল পাপড়ির শোভা বিছিয়ে হুট করে এক ফিকে হয়ে আসা রাতের পরে দেখা যাবে পাপড়িগুলো ঝরে গেছে। তখন দেখলে মনে হয় কোনো এক ফেলে আসা হিম পোয়ানো ঘাসগুল্ম কিছু; কিছু মৃত ফূলের দীর্ঘশ্বাস। তবে সুন্দর আর ক্ষণজন্মা এই নীলতারা নাকি আবার বিষাক্তও! সত্যি, সকল সুন্দরের আড়ালেই বুঝি  কোনো না কোনো কিন্তু থাকে~ প্রকৃতির এই খেলাঘরে গাছ-গাছালি পাখ পাখালি কত যে নিগূঢ় বিদ্যে পেটে নিয়ে বসে আছে! তিনদিন আগে এক অদ্ভুত বাউল বাতাস বয়ে গেছে, সেই বাতাসের গন্ধটা কিছুটা আলাদা। আগের কয়েকবারের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি এমন পাগলপারা ঘ্রাণময় বাতাসের পরেই হঠাৎ করে আমাদের গাছগুলো ভরে যায় পাতায় পাতায়, দেখি কী হয়…এবার…


৯ মে, ২০২১

উমিও, সুইডেন