বেলা অবেলা


স্থির বর্ষণে মিশ্র রং ছড়িয়ে শুয়ে আছে টুকরো টুকরো আলো, ভোরের জানালা গলে অবসন্ন বাতাসেরা ঢুকে পড়ে, যেন সেদিনের প্রথম কূজন, সাথে তার জল বাঁধা মেঘ। মনে পড়ে, সাত বর্ণের ঝালর উড়িয়ে পরিণত শুয়োপোকারা উড়েছিল কোন নদীতীরে, জল ছুঁয়েছিল মেঘের নুপুর, পথ-নদী-সোত শালিখের ডানা। কৃষ্ণচূড়ার পথ করে নেয়া বিকেলে ঝরেছিল আসন্ন বর্ষার টুপটাপ অশ্রুকণা, সেও কবেকার কথা~ সেই নদী বয়ে গেছে সবুজ উঠোন ঘেঁষে, যেন তার সুগভীর বুকে রোদের মোহনা এঁকে। সেখানে শহর শেষে পদ্মগন্ধ ভাসে দৃশ্যত আনমনা বাতাসে। যতটানা স্বপ্নের আসা যাওয়া তারও অধিক আয়োজনে আত্মিক যাতায়াতে সমাজ বিবর্জিত কয়েকজনের বেহিসেবি উচ্ছলতায় মধ্যাকাশে মাঝরাত ছিল তারায় পরিপূর্ণ।  


বাতাসে ছিল সোমেশ্বরীর সবটুকু রমনীয়তা। তারপর নিশ্চুপে মধ্যবিত পথ চলে গেছে অনেকদূরে, যেখানে আড়াল হয়েছে জল, জলের পরিত্রাণ। এইযে সবুজের যত্নময় রেখাভূমে কালচিহ্ন মুছে যাওয়া বর্তমান এবং আগামীর প্রতিযোগ, এখানেইতো যমুনার, কাবেরীর মদবিহ্ববল বিশ্রান্ত স্নান। যে বিকেল স্বভাব কাঙ্গাল তার সান্ধ্য ভাষা এইযে নারীর মতো ছেঁড়া ঘুড়ি হয়ে হারিয়ে গেলো, সে কি নিদ্রাহীন উনুন ঘিরে গল্প শোনায় শাঁখপোকাদের? মারকুটে বাতাসের অনস্তিত্বে ছোট নদী বাড়ি ফিরে এলো আলো জাগার আগেই। এইখানে দুঃখ জাগানিয়া সব নৈবেদ্য সেতো আর কারও নয়।  


আজও উজানদিঘির পাড়ে এইযে অবশিষ্ট চাঁদ স্বপ্নখোর স্মৃতির কারিগর এইখানে চুপকথা উত্তরী হাওয়ায় ভেসে আসে নামহীন সুবাসের মতো, দেবদারুর দীর্ঘশ্বাস হয়ে বিলি কাটে চুলে। অতঃপর শখের উঠোন ফেলে জোনাকী মেয়েদের সাথে চলে যায় দূরে। তখন বৃষ্টি নামে পথে মাঠে ঘাটে, সবুজ পিঁড়িতে বুনো হাঁস ভাসে...জলসিঁড়ির মগ্ন বেলায় হাবিজাবি অভিমানে টুকরো ভেলায় ভেসে যায় অর্থহীন দূরত্ব। কবে শেষ হয়ে গেছে সেইসব দারুণ অবেলা, দেবদারুর সবুজ পথ মাঠ, সন্ধ্যার বয়সী বাতাস- সেই পথে হেঁটে চলে ক’জন উলোটপুরাণ। এইটুকু সংবেদ শুধু ফেলে যায় লিখিত অনুযোগে~ 

জলসিঁড়ি নদীতীরে একদিন প্রখর রোদের জ্যোৎস্না বিহার ~ আর কি পাব ফিরে...

কাঁচ ঘেরা গরাদের ফাঁকে 

আজও নুয়ে আছে আলো, 

যেন সেই অবশিষ্ট চাঁদ। 

পথ-নদী-নিমীলিত বন 

সবকিছু ভরা আছে সেই গৃহকোণ, 

আছে অর্থহীন সময়ের ধূলিকণা 

খুব গভীরে।



প্রথম প্রকাশ লিংক: https://www.sachalayatan.com/node/40516 

১৩ আগস্ট ২০১১



বই: নৈঃশব্দ্যে নৈবেদ্যে এসো (২০২১)

নুশান জান্নাত চৌধুরী